| |
               

মূল পাতা ইসলাম তাকদীর পরিবর্তনে দোয়া ও সৎকাজের ভূমিকা


তাকদীর পরিবর্তনে দোয়া ও সৎকাজের ভূমিকা


মাওলানা রাদ তানবীর     17 January, 2022     08:29 AM    


তাকদীর বা ভাগ্যলিপি যা আল্লাহ্ তায়ালা মানবজাতি সৃষ্টির বহু পূর্বেই নির্ধারণ করে রেখেছেন। কে কী করবে, কার জীবনে কী ঘটবে, কার আয়রোজগার কেমন হবে, কে কতকাল থাকবে পৃথীবির আলোতে, কে জ্বরে মরবে, কে পানিতে ডুবে মরবে, কে আগুনে পুড়ে মরবে, ইত্যাদি সবই নির্ধারিত ভাগ্যলিপিতে। তুমি শিংমাছ দিয়ে ভাত খেয়েছো আজ, আমি দশ টাকায় একটি টুকটুকে লাল গোলাপ কিনলাম, ছোট্ট সালীম খেলতে গিয়ে বল পাশের বাসার গ্লাসে ফেলেছে, একটি আহত পিঁপড়াকে তুমি পানির উপর থেকে তুলে শুষ্ক স্থানে ছেড়েছো, রাতের আঁধারে একটি মশা তোমাকে কামড় দিয়েছে এ সবই গাঁথা ছিল আমাদের ভাগ্যমালায়, লেখা ছিল তাকদীরের পাতায়। পৃথিবীর সব ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ঘটনাও ঘটে থাকে আল্লাহ তায়ালার পূর্বলিখিত ছক অনুযায়ী।
-
এখন প্রশ্ন হতে পারে যে, তাকদীর কি অপরিবর্তনীয়? কোনো আমলের কারণে কি তাতে পরিবর্তন আসে না? উত্তর, হ্যাঁ কিছু কিছু নেক ও সৎ কাজের দ্বারা কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাকদীরের পরিবর্তন ঘটে। যেমন দুআ, পিতা-মাতার খেদমত, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা ইত্যাদি। তিরমিজি শরীফের হাদীস, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
 لا يزيد في العمر إلا البر و لا يرد القدر إلا الدعاء و إن الرجل ليحرم الرزق بخطيئة يعملها 
অনুবাদ: নেককাজ ছাড়া কোনোকিছুই পারে না জীবনপরিধিতে বৃদ্ধি সাধন করতে আর দুআ ছাড়া কোনোকিছুই পারে না তাকদীরকে ঠেকাতে। আর নিঃসন্দেহে মানুষকে তার কৃত মন্দকর্মের কারণে রিযিক থেকে বঞ্চিত করা হয়। (তিরমীযী শরীফ, সুনানে ইবনে মাজাহ)

 الدعاء ينفع مما نزل و مما لم ينزل و إن البلاء لينزل فيتلقاه الدعاء فيعتلجان إلى يوم القيامة 
অনুবাদ: যে বিপদ আপতিত হয়েছে এবং যা এখনও আপতিত হয়নি সবক্ষেত্রেই দুআ উপকারে আসে। আর নিঃসন্দেহে বিপদাপদ অবতীর্ণ হয়, তখন তার সাথে দুআর সাক্ষাত ঘটে, ফলে উভয়ে কেয়ামত পর্যন্ত সময়ের জন্য যুদ্ধে লিপ্ত হয়! (মেশকাত শরীফ)

কোনো কোনো আলেম কুরআনুল কারীমের এই আয়াত দিয়েও তাকদীর পরিবর্তন হওয়ার পক্ষে দলীল পেশ করেন, 
بسم الله الرحمن الرحيم، يمحو الله ما يشاء و يثبت و عنده أم الكتاب (سورة الرعد: ٣٩)
অনুবাদ: আল্লাহ তায়ালা যা ইচ্ছা রহিত করেন আর যা ইচ্ছা বলবৎ রাখেন আর তার নিকটই রয়েছে মূলগ্রন্থ (সূরা রা'দ: ৩৯) 
এরকম আরও বেশকিছু রেওয়ায়েত রয়েছে যেগুলো থেকে বুঝা যায় যে, দুআ সহ বিভিন্ন নেককাজের কারণে তাকদীরে পরিবর্তন ঘটে। 

এক্ষেত্রে মৌলিক কথা হলো, তাকদীর দুই প্রকার।
এক. মুয়া'ল্লাক্ব তথা শর্তযুক্ত। 
যেমন আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে কারও জীবনে বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে পঞ্চাশ বছর। তবে তার সাথে এই শর্ত দেওয়া হয়েছে যে, যদি সে পৃথীবিতে পিতা-মাতার খেদমত করে তাহলে সে আরও বিশ বছর পাবে। যদি সে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে তাহলে দশ বছর পাবে।

দুই. মুবরাম তথা চূড়ান্ত ও অপরিবর্তনীয়।
এই প্রকারটির কোন পরিবর্তন ঘটেনা পরবর্তীতে। এটা আল্লাহ তায়ালা চূড়ান্তভাবেই নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে পরবর্তীতে কোনো নড়চড় হবে না।

আমরা অনেকসময় বলে থাকি, আমি এরকম খারাপ হবো এটা তো আল্লাহই ঠিক করে দিয়েছেন, আল্লাহ তায়ালা যা কপালে রেখেছেন তাই তো হবে, ইত্যাদি, এরকম বলে বলে গাছাড়া ভাব নিয়ে চলা, মন্দতে ডুবে থাকা কিছুতেই কাম্য নয়। আমাদের এই বলা ঠিক নয় যে, সব তো পূর্বেই নির্ধারিত হয়ে গেছে, কে জান্নাতে যাবে আর কে জাহান্নামে যাবে সবই নির্ধারিত, তবে আর নেককাজ করে লাভ কী ? এমনটি মনে করে চলা কিছুতেই ঠিক নয়। বরং এই মনোভাব ত্যাগ করে সঠিক ও বিশুদ্ধ চিন্তা গ্রহণ করা ও বেশি বেশি নেককাজ ও দুআ করা উচিত। হতে পারে এই নেককাজ ও দুআর মাধ্যমেই একজন জাহান্নামী থেকে জান্নাতী হতে পারবো, এসবের মাধ্যমেই হয়ত আমাদের সামনে থাকা মন্দ ও দুঃখের দৃশ্যটা পাল্টে হয়ে যাবে ভালো ও সুখসমৃদ্ধিতে ভরপুর, এসবের মাধ্যমেই হতে পারে আমরা লাভ করবো দীর্ঘজীবন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন।