| |
               

মূল পাতা আরো সোশ্যাল মিডিয়া ত্বহা আদনানদের সত্য অস্বীকারের এ প্রবণতা কেন?


ত্বহা আদনানদের সত্য অস্বীকারের এ প্রবণতা কেন?


সৈয়দ শামছুল হুদা     09 January, 2022     02:05 PM    


আবু ত্বহা আদনান বর্তমান সময়ে তরুনদের আলোচকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তার  আলোচনার ধরণ চমৎকার। কুরআন তেলাওয়াত সুন্দর। আরবি বলার স্টাইলটাও বেশ সুন্দর। কিন্তু দীর্ঘ একটা সময় স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করেছেন। ইংলিশটা ভালো বলতে পারেন। সবকিছুই ভালো ছিল। কিন্তু তিনি মাঝে মাঝে অনেক বিষয়ে এমন সব কথা বলেন যা আলেম-উলামাদের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি করে। অস্থিরতা তৈরি করে। তার অনেক ব্যাখ্যার সাথে উলামায়ে কেরাম একমত হতে পারেন না।

সর্বশেষ কুরআন হিফজ নিয়ে যে সব কথা বলেছেন, তা শুনতে খুব ভালো লাগে। যুক্তিসংগই মনে হয়। কিন্তু তার উপস্থাপনার স্টাইলটা ভালো ছিল না। একটা সমস্যা সমাধান করতে আরো তিনটা সমস্যার তৈরি করছেন। তার কথায় মনে হয়, বর্তমানে যেভাবে ছোট ছোট সন্তানরা হিফজ করছে এটা সঠিক পদ্ধতি নয়। মা-বাবারা সন্তানদেরকে এভাবে হিফজ করিয়ে ভুল করছেন। অর্থ শিখা ছাড়া কুরআন হিফজের এসব আয়োজন পুরোটাই অনর্থক। হিফজ করার আগেই তাদেরকে আরবি ভাষা শিখাতে হবে, তারপর হিফজ করাতে হবে। আরবি না বুঝে তোতাপাখির মতো কুরআন মুখস্থ করার মধ্যে কোন উপকার নাই। আর এটা বুঝাতে গিয়েও পবিত্র কুরআনকে হাত দিয়ে উপরে তুলে বারবার অর্থ বুঝা ছাড়া এই বই এই বই মুখস্থ করার মধ্যে কোন সওয়াব নেই” বলার ধরনটাও সুন্দর ছিল না। 

অপ্রাসঙ্গিকভাবে সেখানে ইংরেজি শিক্ষার বিষয় টেনে এনেছেন। আলেমরা ফতোয়া দিয়ে সব মানুষকে ইংরেজি শিক্ষা থেকে দূরে রেখে সর্বনাশ করেছেন। এই ফতোয়ার দায় কে নিবে? গোটা আলেম সমাজকে তিনি এক ধরনের কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন। একবারও ভাবলেন না যে, গোটা দু’শ বছর ইংরেজারা দেশ শাসন করলো, সেই দেশে এখনো কোটি কোটি মুসলমান কোত্থেকে আসলো? কী করে এদেশে লাখ লাখ হাফেজ, আলেম, মসজিদ, মাদ্রাসা তৈরি হলো, কী করে ত্বহা আদনানদের মতো জেনারেল শিক্ষিতরাও দীন শিখলো, দীন শিখার প্রেরণা পেলো, তা যেন সবকিছু ভুলে গেছে। 

ভারতীয় উপমহাদেশকে হিন্দু ও খ্রীষ্টানরা মিলে একটি স্পেনে পরিণত করতে পারতো, সেই দেশটিকে স্পেন হওয়া থেকে কারা রক্ষা করলো, তাদের অবদানকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার এই প্রবণতা বর্তমানের কিছু শাঈখ নামধারিদের মধ্যেও দেখা যায়। আফসোস হয় তাদের জন্য। সত্য অস্বীকারের এই প্রবণতা অনেক ক্ষতিকর। অতীতের আকাবিরগণ যতটুকু করেছেন সেই ভিত্তির ওপর আপনাদের মতো নব্য জ্ঞানিরা বাকিটা পূরণ করুন। কিন্তু অতীতের আলেমদের ওপর দোষ চাপিয়ে নিজেরা কী কৃতিত্ব নিতে চান? 

সম্প্রতি ত্বহা আদনানদের মতো আরো কিছু শাঈখ তৈরি হয়েছে যারা কথায় কথায় দেশের দেওবন্দি বা কওমি আলেমদের ঠেশ দিয়ে কথা বলেন। তাদের সকল প্রকার অবদানকে ঢালাও অস্বীকার করেন। সত্যকে অস্বীকার এই প্রবণতা আত্মঘাতি। ইংরেজি শিক্ষার পিছনে বাধা কারা ছিল তার সত্যিকারের ইতিহাস শুনতে ড. সলিমুল্লাহ খান এর একটি বক্তব্য শুনতে পারেন। ইংরেজি শিক্ষার পেছনে এদেশের আলেমরা বাধা ছিল না। বাধা ছিল সেই সময়ের শাসকদের ষড়যন্ত্র। আলেমগণ ইংরেজি শিখেন নাই বটে, কিন্তু সাধারণ মুসলমানদের ইংরেজি শিক্ষার সুযোগ দেওয়ার জন্য দশ হাজার লোকের দরখাস্তেও ইংরেজ ও তৎকালীন সুবিধাবাদি গোষ্টী হিন্দুত্ববাদি শাসকদের মন গলেনি। তার দায় আলেমদের নিতে হবে কেন? 

ইতিহাস না জেনে ঢালাওভাবে আলেমদেরকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে তিনি নিজেকেই বিতর্কিত করলেন। আলেমদের চোখে তিনি নিজেই ছোট হলেন। এর বাইরে আর কিছুই নয়।