| |
               

মূল পাতা সফর শত বছরের লাকসাম রেলওয়ে জংশন


কত লাকসাম কত বাত্তি!

শত বছরের লাকসাম রেলওয়ে জংশন

একসময় এই জংশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিল ১৭০০


এলিজা বিনতে এলাহী     31 May, 2021     02:04 PM    


লাকসাম রেলওয়ে জংশনের প্রতিষ্ঠাকাল ১৮৯৩,  প্রায় ৩০০ একর সম্পত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। এই স্টেশনে বর্তমানে বিরাট স্টেশন ভবনসহ ৪টি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। বাংলাদেশে ৫টি বৃহত্তম জংশনের একটি।

শত বছরের এই রেল স্টেশনে খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম পুরানো ভবনগুলো কেমন অবস্থায় রয়েছে। খুব বেশি পুরোনো ভবনের অস্থিত্ব নেই। রেল স্টেশনে ৩-৪টি রয়েছে। স্টেশনের বাইরে বিভিন্ন কোয়ার্টার ও ক্লাব ঘর রয়েছে। তবে বেশ নাজুক অবস্থা এগুলোর।

উপরে প্রথম যে লাইনটি লিখেছি, সেটি কেন লিখলাম সে সম্পর্কে বলছি-
কত লাকসাম কত বাত্তি !
লাকসাম কুমিল্লার একটি প্রাচীন উপজেলার নাম। লাকসামের নামের সাথে এই  প্রবাদবাক্যটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ প্রবাদবাক্য লাকসামের ঐতিহ্যবাহী রেলওয়ে জংশনকে ঘিরে।

তবে সেই জংশনে এখন আগের মতো আর বাতি জ্বলে না। ‘কত লাকসাম-কত বাত্তি’র উৎপত্তি খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে নানা গল্প। স্থানীয়রা বলেন,  লাকসাম, নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ, সদর দক্ষিণের একাংশ নিয়ে ছিল তৎকালীন বৃহত্তর লাকসাম। তখন এ এলাকায় বিদ্যুৎ আসেনি। রেলওয়ে লাকসাম জংশনে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পাওয়ার হাউজের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করত। এ বিদ্যুতের মাধ্যমে স্টেশনসহ আবাসিক এলাকায় বাতি জ্বলত।

গ্রামের লোকজনের কাছে বৈদ্যুতিক বাতি ছিল একটি আশ্চর্য বিষয়। জংশনের চারদিকে তখনও শহর গড়ে ওঠেনি। দূরের গ্রাম থেকেও রাতে বাতির বহর চোখে পড়ত। গ্রামের মানুষ নাকি ভয়ে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী গ্রামে চলে যেত। তারা ট্রেনকে ভয়ংকর কিছু  মনে করতো। এলাকায় ট্রেন বন্ধের জন্য এক সময় নাকি জনমতও গড়ে উঠেছিল।
 
ব্রিটিশ তথা পরবর্তী পাকিস্তান আমলে এ এলাকার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র বাহন ছিল ট্রেন। লাকসাম জংশন সবসময় উৎসবমুখর ছিল। প্রথমে লাকসাম থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত রেললাইন চালু ছিল। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর রেল রুট চালু হয়।

হারিকেন আর কুপি দেখা অভ্যস্ত জনপদ বাতি জ্বালানো দেখে বিস্মিত হয়ে এলাকায় ছড়িয়ে দিলো ‘লাকসামে কত বাত্তি জ্বলেরে’। তা ধীরে ধীরে ‘কত লাকসাম-কত বাত্তিতে’ রূপান্তরিত হয়।

একসময় এই জংশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিল ১৭০০। এখন সে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০০-তে। স্টেশনে নতুন ভবন তৈরি হচ্ছে কিন্তু শত বছরের রেল স্টেশনের ঐতিহ্যও ধরে রাখা প্রয়োজন।

(লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে সংগৃহীত। ইষৎ সম্পাদিত ও পরিমার্জিত)