মূল পাতা মুসলিম ঐতিহ্য ইসলামি আইন : ইতিহাসের গৌরবময় সময়ে
লাবীব আব্দুল্লাহ 29 April, 2021 03:41 PM
তাজিকিস্তানের মনোরম শহর আওজান্দ। এটি মাওরাউন্নাহার এলাকার ফারগানা প্রদেশে। আল্লামা কাজী খান এই এলাকার সন্তান। ফাতাওয়ায়ে কাজী খান তার রচিত ইসলামিক ল-এর অনবদ্য গ্রন্থ।
খুরাসানের এক বস্তি সারাখসী। মুহাম্মদ ইবনে আহমদ শামসুল উলামা সারাখসী সেই এলাকায় বসবাস করতেন। আমু দরিয়ার ওপারে মাওয়ারাউন্নাহারে। ইলমের পাহাড় যেখানে। আল্লামা সারাখসীকে শাসকের বিরুদ্ধে সত্য উচ্চারণ করার অপরাধে বন্দি করা হয়। আওজান্দের এক কূপে তাকে বন্দি করা হয়েছিল। জগদ্বিখ্যাত এই ফকীহ জুমার নামাযের সুযোগ পান নি। অথচ তার লেখা নিয়মকানুন পড়ে লাখো মানুষ নামায শিখেছে। আজও শেখে।
তিনি বন্দি অবস্থায় কূপের পাড়ে তালেবে ইলমদের পড়ানোর অনুমতি পেলেন। সাথে কোনো কিতাব নেই। ছাত্ররা কূপের পাড়ে আসত। তিনি ইসলামি আইন পড়ানো শুরু করলেন।
হাকিম মারওয়াজী। পুরো নাম মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ। ৩৩৪ হিজরিতে মৃত্যু। তার রচিত কিতাব ‘আল কাফী’। আল্লামা সারাখসী সেই কূপে বসেই আল কাফীর ব্যাখ্যা শুরু করলেন। ইমলা করালেন। ইমলা হলো কথক তিনি, লেখক অন্যরা।
তিনি এই কিতাবের নাম দিলেন ‘আল মাবসূত’। হানাফি মাযহাবের বিশ্বকোষ। প্রতিটি মাসআলা বা আইনের ধারায় দলিল দিয়েছেন কুরআন, হাদীস ও আছার দ্বারা। শাফি ও মালিকি মাযহাবের সাথে হানাফি মাযহাবের মুকারানা করেছেন। তুলনামূলক আলোচনা করছেন। প্রয়োজনে অন্য মাযহাবকে তারজিহ দিয়েছেন দলিলের আলোকে।
এসব আইনের আলোচনা করেছেন স্মৃতি থেকে। বৈরুত থেকে আল মাবসুত প্রকাশিত হয়েছে ৩১ খণ্ডে। এক খণ্ড শুধু সূচিপত্রই। ইসলামি আইনের পৃথিবীখ্যাত এই কিতাবের লেখক ৪৮৩ হিজরি/১০৯০ ঈসায়ী সনে আল্লাহর রহমতের ছায়ায় চলে যান।
যারা বলেন হানাফি মাযহাবের আইনের দলিল নাই, তারা কিতাবটি সংগ্রহে করে পড়ে তারপর কথা বললে ভালো। আমরা যারা দলিল পাই না, তাদের ত্রিশ খন্ডের কিতাবটি পড়ার টেবিলে থাকলে ভালো। কোথায় গেলো সেই সোনালি দিন। ভুলে গেছি আমাদের ইতিহাসের সোনালি-গৌরবময় অধ্যায়।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা, ইবনে খালদুন ইনস্টিটিউট ও শিকড় সাহিত্য মাহফিল।