| |
               

মূল পাতা সফর মধ্য এশিয়ার দেশ কাজাখস্তান ভ্রমণ


মধ্য এশিয়ার দেশ কাজাখস্তান ভ্রমণ


ইশায়াত আহমেদ     11 January, 2021     01:59 PM    


কাজাখস্তান নামটা শুনে সহজেই পাকিস্তান আর আফগানিস্তানের সাথে মিলিয়ে ফেলতে মন চাইলেও সেন্ট্রাল এশিয়ার এই দেশটি তার আশপাশের অন্য দেশের চাইতে যথেষ্ট উন্নত একটি দেশ। শুধু উন্নত তাই না, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যও দেখার মত একটা জায়গা আর কম খরচে থাকা খাওয়ার সুবিধা তো আছেই। ভিসার পদ্ধতি, থাকা, খাওয়া আর দেখার মত কী কী আছে তা নিয়েই এই লেখা।

ভিসা যেভাবে করবেন
সেন্ট্রাল এশিয়ায় উজবেকিস্তান আর কিরগিজস্তান আমাদেরকে ই-ভিসা দিলেও কাজাখস্তানের ভিসার সিস্টেম একটু ভিন্ন। তারাও ই-ভিসা দেয় কিন্তু সাথে লাগবে লেটার অফ ইনভাইটেশন। শুনতে জটিল মনে হলেও আসলে এই LOI জোগাড় করা তেমন কঠিন না কিন্তু বেশ দামি। অনেক এজেন্সি বাংলাদেশিদের দিতে চায় না। তাই যারা দেয় বেশ অনেক টাকার বদলেই দেয়। অনেকে প্যাকেজ ট্যুরের বদলে দেয়।

ওই লেটার অফ ইনভাইটেশনে একটা কোড থাকে, যেই কোডটা দিয়ে পরে ই-ভিসার জন্য অ্যাপ্লাই করা যায় অথবা ভারত (সম্ভবত উজবেকিস্তান থেকেও) চাইলে স্টিকার ভিসার জন্য অ্যাপ্লাই করতে পারেন।

আমি Global Connect নামের এক এজেন্সি থেকে করিয়েছি, তাদের নামে অনলাইনে অনেক পজিটিভ রিভিউ পেয়েছি তাই তাদের দিয়ে করানো। আপনারা চাইলে নিজেরা আরও খুঁজে দেখতে পারেন। কারণ এরা টাকা অনেক বেশি রাখে (১৫০ ডলার)। তারা একটা ফর্ম দিবে ওইটা ফিল আপ করে সাথে আপনার পাসপোর্টের স্ক্যান করা ছবি আর আপনি যেখানে কাজ করেন সেখানের কোম্পানির সিলসহ আপনার পদবী আর চাকরির প্রমাণ আপনার এমপ্লয়ারের কাছ থেকে। দিলে ৭-১০ দিনের মধ্যে LOI পাবেন ওইটা দিয়ে ই-ভিসার জন্য অ্যাপ্লাই করলে ভিসা পেতে ১০ মিনিটের মত লাগে। কার্ডেও পেমেন্ট নিতে পারে না অনেক এজেন্সি, তাই পেপ্যাল লাগতে পারে।

যেভাবে যাবেন
আপনি যদি দিল্লি থেকে আলমাটি যান আর ১-২ মাস আগে প্ল্যান করতে পারেন তাহলে ৪০০ ডলার অর্থাৎ ৩৪০০০ টাকার আশেপাশেই রিটার্ন টিকেট করে ফেলতে পারবেন। আমার ভারতের মাল্টিপল ট্যুরিস্ট ভিসা করা ছিল এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশনে কোনও সমস্যা করেনি। লোকাল ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম অনেক ভাল, আমাদের উবারের মত তাদের ইয়ানডেক্স আছে, ভাড়ার একটা উদাহারন দেই- শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে এয়ারপোর্টে আসতে ভাড়া এসেছিল ৩৬০ টাকার মত। আর শহরের ভিতরে ৫-৭ কিলোমিটারের ভাড়া সব সময়েই ১০০-১৫০ টাকার আশেপাশে ছিল। তবে ব্যস্ত সময়ে কখনও কখনও ২০০ টাকার কাছে গিয়েছে কিন্তু এর বেশি না। লোক্যাল ট্রান্সপোর্ট, বাসের ভাড়া ফিক্সড্‌ ১৮-২০ টাকার মত যদি আপনার ট্রান্সপোর্ট কার্ড থাকে যেটা কিনে নেওয়া খুব ঝামেলার ব্যপার না। তবে লোকাল ট্রান্সপোর্টের রুটগুলি জানতে আপনাকে গুগল ম্যাপের বাইরে 2GIS অ্যাপটা নামিয়ে নিতে হবে।

খাওয়া দাওয়া
আপনি যদি শুধু আলমাটিতে থেকে এসে পড়েন, তাহলে খাওয়া দাওয়ার সমস্যা হওয়ার তেমন কারণ নেই। হালাল দোকানও যেমন পাবেন তেমন ভাত খুঁজে বের করাও তেমন সমস্যার না। চাইনিজ, কোরিয়ান, ওয়েস্টার্ন সব রকম খাওয়াই সহজে পাওয়া যায়। বিভিন্ন নতুন শপিং মলে চাইলে ইংরেজি মেন্যুও দিবে আপনাকে আলাদা অনেক দোকানে। তাও যদি ভাষা সমস্যার কারণে কোথাও অর্ডার করতে সমস্যা হয়, তাহলে বিভিন্ন মিউজিয়ামের ক্যাফেটেরিয়া এমনকি কিছু মসজিদেরও নিজস্ব ক্যাফেটেরিয়া আছে যেখানে ব্যুফের মত করে খাওয়া সাজানো থাকে সেখানে বেঁছে বেঁছে খাওয়া অর্ডার করতে পারেন। এইসব জায়গায় খাওয়ার দামও বেশ কম থাকে। স্যুপ, রুটি, রাইস আর ঘরে বানানো শরবত (compote নামে তাদের একটা ড্রিংক আছে অনেক দোকানেই রাখে, এছাড়াও লেবুর শরবত রাখে অনেকে)-সহ এইসব ক্যাফেটেরিয়াতে ২৫০-৪০০ টাকার মধ্যে খাওয়া পেয়েছি। কিছু কিছু দোকানে কম্বোও রাখে ২৫০-৩০০টাকার মধ্যে। এই এলাকায় ঘোড়ার মাংস বেশ পপুলার, এইগুলিতে নাকি তেমন ফ্যাট থাকে না আবার এনার্জি পাওয়া যায় (তাদের ভাষ্যমতে)।

থাকা
সর্বনিম্ন ১৫০০ টাকা থেকে শুরু বলা যায়। যদি হোস্টেলে না থেকে প্রাইভেট রুম নিয়ে থাকেন। আমি Airbnb, অ্যাপার্টমেন্ট, হোটেল, হোস্টেলের প্রাইভেট রুম সব মিলিয়ে ছিলাম। হোস্টেলে থাকলে এর চেয়েও কমে পাবেন আবার আস্ত অ্যাপার্টমেন্ট খুঁজলেও পাবেন ২৩০০-৩০০০ টাকার মধ্যে।

কী আছে দেখার
সিল্ক রোডের অংশ হিসাবে ঐতিহাসিক জায়গাও যেমন আছে কাজাখস্তানে, দেখার মত তেমনই পাহাড় ঘেরা আলমাটিতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক জায়গাও আছে অনেক! তারই কিছু ছবি দিয়েছি পোস্টে। শুধু আলমাটি থেকেই যেতে পারেন Big Almaty Lake, Charyn Canyon, Lake Kaindy, Kolsai Lake। চাইলে Saty গ্রামেও কাটিয়ে আসতে পারেন এক রাত সম্ভব হলে তাদের ট্রেডিশনাল yurt এ! (তাঁবুর ঘরগুলি) আবার শহরের ভিতরেই ট্যাক্সি নিয়ে চলে যেতে পারেন Zaiilisky Alatau mountain range এর অংশ Shymbulak যেখানে আছে স্কি রিসোর্ট, Kok Tobe পাহাড়ে যেতে পারেন কেবল কারে করে যেখান থেকে শহরের বেশ সুন্দর একটা ভিউ পাওয়া যায়।

এর বাইরে যেতে পারেন কাজাখস্তানের রাজধানী নুর সুলতানে (আস্তানা নামেই যদিও বেশি পরিচিত) আর সিল্ক রোডের অংশ Shymkent-এ যেখানে খাজা আহমেদ ইয়াসাবির দরগা আছে। তবে আপনি যদি আগে উজবেকিস্তান গিয়ে থাকেন বা যাওয়ার ইচ্ছা থেকে থাকে পরে তাহলে Shymkent না গেলেও চলে আমি মনে করি।

-জেড