রহমত টোয়েন্টিফোর ডটকম 10 December, 2020 07:06 PM
কুুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙ্গচুরের ঘটনায় দেশের শীর্ষ আলেম-উলামাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আজ (১০ ডিসেম্বর) বেলা ১২টায় রাজধানীর রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ।
বেলা ১২টা থেকে চলা এ সংবাদ সম্মেলন হেফজাতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী পক্ষে মূল বক্তব্য পাঠ করন সংগঠনটির নায়েবে আমির মাওলানা নূরুল ইসলাম। এতে তিনি বলেন-
জাতির বিবেক প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ, সম্প্রতি দেশে ঘটে যাওয়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের বক্তব্য জাতির সামনে তুলে ধরার জন্য আপনাদেরকে এখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ায় আপনাদের শুকরিয়া জানাচ্ছি।
আপনারা লক্ষ্য করেছেন, সাম্প্রতিক হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর, দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমেদ্বীন, হাটহাজারী মাদ্রাসার সম্মানিত শাইখুল হাদিস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর নায়েবে আমির মাওলানা সৈয়দ ফয়জুল করীম এর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও জননেত্রী পরিষদের সংগঠন এর পক্ষ থেকে আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট বিচারক অভিযোগ তদন্তের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।
আমিরে হেফাজতের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার আরজিতে ‘মদিনা সনদের প্রসঙ্গ’ উল্লেখ করা হয়েছে; যা এক ভয়াবহ ও সুদূরপ্রসারী চক্রান্তের সুস্পষ্ট আলামত। এটি শুধু হেফাজতে ইসলামের আমীর পর্যন্তই সীমাবদ্ধ বলে আমরা মনে করি না। বরং এটা সরাসরি প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র বলে মনে হচ্ছে। সুতরাং আমরা সকল মিথ্যা মামলার তীব্র প্রতিবাদ ও অনতিবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। সেই সাথে চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা, আমরা আরো উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করেছি যে, ইসলামবিদ্বেষী চিহ্নিত মহল সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমদের বিরুদ্ধে লাগামহীনভাবে অভদ্র ও অশোভন বক্তব্য দিচ্ছেন এবং বিষোদগার করেছেন। তারা মরহুম শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক ও মরহুম সৈয়দ ফজলুল করীম পীর সাহেব চরমোনাইসহ দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও জঘন্য কটুক্তি করছে এবং ঘৃণা ছড়াচ্ছে। এতে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা অবনতির আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে সেকুলার শব্দের আড়ালে আশ্রয় নেয়া ইসলামবিদ্বেষীদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য, আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ এই কুচক্রী মহল কে রুখে দিতে রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে, ইনশাআল্লাহ।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ, শান্তির ধর্ম ইসলামের বিস্তার মানুষের নৈতিক উৎকর্ষতা বৃদ্ধি, ঈমান-আমলের উন্নতি সাধনে আবহমানকাল থেকে শীতের মৌসুমে দেশের সর্বত্র অনুষ্ঠিত ওয়াজ মাহফিলের ভূমিকা সর্বজন বিদিত। এ সময়ে কওমি মাদ্রাসাগুলো তাদের বার্ষিক মাহফিল অনুষ্ঠান করে থাকে। মানুষকে হেদায়েতের পথে চলার আহ্বান ও সৎ-সুন্দর শৃঙ্খলা পূর্ণ জীবন যাপনে উদ্বুদ্ধকরণে উলামায়ে কেরাম তাদের ধর্মীয় কর্তব্য পালন করে থাকে। অথচ নানা অজুহাতে এই সকল আয়োজনে বাধা দেওয়া হচ্ছে। আজকের এই সংবাদ সম্মেলন থেকে নির্বিঘ্নে ওয়াজ মাহফিল আয়োজন এর পথে ইসলামবিদ্বেষী প্রশাসনিক বাধা-বিপত্তি সমূহ তুলে নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের সংবিধানে নাগরিকদের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। সুতরাং ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা দান ও গোমরাহীর পথ পরিহারের আহবান জানানো আলেম সমাজের সাংবিধানিক অধিকার এবং ধর্মীয় কর্তব্য। কোন ব্যক্তি বিশেষ সংগঠন বা সরকার আলেমদের এই কর্তব্য পালনে হস্তক্ষেপ করার বৈধতা রাখে না। আমরা আশাবাদী যে, কোরআন শিক্ষা ও দিনের তালিমের বরকতে দেশে আল্লাহর খাস রহমত নাজিল হবে এবং যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দুর্বিপাক থেকে আল্লাহ পাক আমাদেরকে হেফাজত করবেন।
সম্মানিত সাংবাদিক ভাইয়েরা, বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাসে সর্ববৃহৎ প্রকল্প পদ্মা সেতু ও এর সংযোগ সড়কের গোড়ায় রাজধানীর ধোলাইপাড়ে নির্মিতব্য ভাস্কর্য দেশের সর্বত্র ব্যাপক বিতর্ক তৈরি করেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে যে কোন প্রাণীর ভাস্কর্য নির্মাণের বিষয়টি ইসলামসম্মত নয় বলে সর্বসম্মত ফতোয়া প্রদান করা হয়। যা একটি পত্র দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ জনতা এবং আলেম সমাজের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় সংগঠন হেফাজতে ইসলাম ভাস্কর্য নির্মাণ বিষয়ে সরকারকে ইসলামের আকিদা ঈমান ও শিক্ষার বিরুদ্ধে গিয়ে পৌত্তলিকতাকে প্রসারের রাষ্ট্রীয় গোমরাহীর পথ পরিহার করার আহ্বান জানাচ্ছে।
দেশ বরেণ্য আলেমদের এই শান্তিপূর্ণ ও যৌক্তিক উপদেশ এবং দাবিকে বিতর্কিত করার জন্য কে বা কারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার মাধ্যমে একটি ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেছে। হেফাজতে ইসলাম এভাবে নিজ হাতে আইন তুলে নেয়া কিংবা গোপন তৎপরতার পথ অনুসরণ ও অনুমোদন করে না। এটা জানা থাকার পরও সরকার ক্ষমতাসীন দল ও তাদের সমর্থকদের মধ্যকার ইসলামবিদ্বেষী একটি মহল কুষ্টিয়ার ঘটনার দায় ওলামায়ে কেরাম ও হেফাজতে ইসলাম এর নেতৃবৃন্দের উপর চাপিয়ে দিয়ে তাদেরকে ঘায়েল করার অপচেষ্টা করছে। আমরা ষড়যন্ত্রের এমন ঘৃণিত পথ পরিহার করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ করছি।
প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা, আমরা আশা করব আজকের সংবাদ সম্মেলনের পর অদ্ভুত পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখার স্বার্থে ও দেশের উন্নতি ও অগ্রগতি অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে উল্লিখিত সমস্যাগুলো সমাধানের সরকার যথাযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে উত্তম বিনিময় দান করুন। আমিন।